আজ শুক্রবার, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ খুনের লাশের গন্ধ ৫ বছরে কাটেনি

সংবাদচর্চা রির্পোট
শত্রু আসে বন্ধু বেশে। সবার অজান্তে বাজিয়ে সে ক্ষতির
বাঁশি। থাকে অচেনা প্রান্তে। কার জন্য ৭ খুন, কে ছিল
দ্বন্দ্বে মূল, অনেক কিছুই প্রকাশ করা হয়। কৌশল ব্যবহার করে
ধামা চাপা দেয়া হয় সব কিছুই।

অপহরণের পর নৃশংস ভাবে হত্যা, শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে উঠে
লাশের মিছিল, অবরোদ্ধ হয় পুরো নারায়ণগঞ্জ। আলোচনায়
আসে প্রভাবশালীর নামও। তবে মামলা বা চার্যশিটে নেই
প্রভাবশালীর ছায়া টুকোও! এছাড়া হত্যা কারীরা তাদের লোক
জনের মাধ্যমে একের পর এক হুমকি প্রদান করে মামলার
বাাদিকে। ২ বছর সাত মাস ১৪ দিন পর ২৬ জনকে মৃত্যুদন্ড ও ৯
জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করেন নারায়ণগঞ্জ
জেলা দায়রা জজ আদালত।

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত হত্যাকান্ডের ৫ বছর পূর্ণ হলো
আজ। গত বিশ মাস আগে উচ্চ আদালত এই মামলার রায় প্রদান
হলেও এখনো তা কার্যকর না হওয়ায় অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন
নিহতদের স্বজনরা। এছাড়া সরকারের কাছ বিভিন্ন সময়ে
সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হলেও বাস্তবে তা না
পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অধিকাংশ পরিবার। উচ্চ
আদালতের রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি সরকারের কাছে।

অপরদিকে দীর্ঘ পাঁচ বছরে চরম হতাশার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন
করছেন নিহত সাত পরিবারের স্বজনরা। স্বজন হারানোর ব্যাথ্যায়
এখনো কাতর তারা। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে দেয়া
সহযোগিতার ব্যাপারে আশ্বাস দেয়া হলেও পরবর্তীতে কেউ
খোঁজ না নেয়নি এসব পরিবারের। পরিবারের উপার্জনক্ষম
ব্যক্তিদের হারিয়ে অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা কষ্টের মধ্যে দিন
কাটাচ্ছে। নানা ক্ষোভের মধ্য দিয়েও তারা অপেক্ষায় রয়েছে সাত
খুন মামলার রায় কার্যকরের দিনটির জন্য।

“মায়ের গায়ে কি লাশের গন্ধ লাগে। বাবরে বিচার পাইলাম না
শুধুই অপেক্ষা করায় দেশের বিচার ব্যবস্থা। পেট কাইটা ইট
দিয়া নদীতে ফালায় আমার ছেলের লাশ। কান্না করতে গিয়ে
অজ্ঞান হয়ে যায় নিহত তাইজুলের মা।

সাত খুনের ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর ছিলেন প্যানেল মেয়র
নজরুলের গাড়ী চালক। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুপুর বলেন,
“স্বামীকে হত্যা করার সময় নয় মাসের অন্তঃসত্বা ছিলাম

স্বামীর মৃত্যুর একমাস পর জন্ম নেয়া মেয়ে রোজা। তার বয়স ৫
বছরে তবুও স্বামীর বিচার পেলাম না।

৭ খুন মামলার বাদি সেলিনা ইসলাম বিউটির কাছে ৫ বছরের
বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন “৭ জনকে হত্যার রায়
কার্যকরের ব্যাপারটি বিলম্ব হওয়ায় সংশয় প্রকাশ করছি।
আদালত রায়টি দ্রুত কার্যকর করবে এটা আমার প্রত্যাশা।

বাদী পক্ষের প্রধান কৌশলী এড. সাখাওয়াত হোসেন খান
দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন,“ফাঁসির আসামীদের আপিল
নিষ্পত্তি করবে আদালত এটা আমাদের প্রত্যাশা। ঘটনার পর
থেকে এখন পর্যন্ত আমি ও আামর সহকারী আইনজীবীর
মাধ্যমে সর্বোচ্চ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। এই মামলায় জেলা
জজ ১৬ জানুয়ারী ২০১৭ সালে মোট ৩৬ জন আসামীকে
সাজা প্রদান করেন। এদের মধ্যে ২৫ জনকে ফাঁসি এবং
বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। পরবর্তীতে
একই বছরের ২২ আগস্ট উচ্চ আদালতে সাজা কমিয়ে ফাসি
থেকে ১১ জনকে যাবতজীবন প্রদান করেন।  বর্তমানে
সুপ্রিম কোর্টের এ্যাপিলেড ডিভিশনে বিবাদী পক্ষের রায়
বাতিলের শুনানি চলছে। সরকারের সদইচ্ছা এবং মাননীয়
এ্যার্টনী জেনারেলের হস্তক্ষেপই পারে চুড়ান্ত রায় প্রকাশ এবং
তা কার্যকর করতে। দীর্ঘ পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও
নিহতদের স্বজনদের মধ্যে সস্তি নেই। রায় কার্যকর হলেই
পরিবারের সদস্যরা এমনকি সারা দেশের মানুষ বুঝবে দেশে
আইনের শাসন আছে। আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এই
মামলার সাজা প্রাপ্ত ১৩ আসামী এখনো পলাতক আছে ।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত তাদের দ্রুত আটক করে
আদালতে সোপর্দ করা। পলাতক আসামীদের কারনে ঝুকিতে
আছে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
দেশে অনেক হত্যাকান্ডের ঘটনায় সরকার নিহতের পরিবারকে
সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। কিন্তুু দুঃখের বিষয়
আলোচিত সাত খুনের পরিবারের কোন সদস্যকেই তেমন
কোন সাহায্য দেয়া হয়নি।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে বাড়ী
ফেরার পথে ঢাকা নারায়নগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা
থেকে অপহৃত হয় নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল
মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার সহ সাতজন।
৩০এপ্রিল এবং ১লা মে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে উঠে সাতজনের
লাশ।

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ
আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ মামরার রায়ে
প্রধান আসামী নূর হোসেন ও সাবেক তিন র‌্যাব
কর্মকর্তাসহ আসামী ২৬ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং বাকি ৯
জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করেন আদালত।
পরবর্তীতে আসামীপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে
আপীল করে।

২০১৭ সালের ২২ আগস্ট উচ্চ আদালতের রায়ে নূর হোসেন,
র‌্যাবের তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানা সহ ১৫
জনের মৃত্যদন্ড, ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ৯ জনকে
বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। বর্তমানে আসামী পক্ষ
আবারো এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপীল
বিভাগে আবেদন করে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ